30 C
Kolkata

Business: ফেলে দেওয়া মাছের আঁশ বিদেশে রপ্তানি করে কোটিপতি

জীবনেও ভাবেননি মাছের আঁশের ব্যবসা করবেন। আর এখন পুরো ধ্যানজ্ঞানই তাঁর এই ফেলনা জিনিসটি। রপ্তানি তো করছেনই, রীতিমতো দেশে আন্তর্জাতিক মানের প্রক্রিয়াকরণ কারখানা করার চিন্তা করছেন। ১৬ বছর আগের একটি ঘটনার কথা মনে করেন জুলফিকার। বলেন, ‘বিদেশি এক ক্রেতার সঙ্গে পরিচয় হয় খুলনায়। তিনিই বুদ্ধি দিলেন প্রথম। মাছের আঁশ প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। কীভাবে সম্ভব, তা শিখিয়েও দিলেন তিনি। সেই যে হাঁটা শুরু করলাম, আর পেছনে তাকাইনি।’

শুরুর দিকে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেন তিনি মাছের আঁশগুলো যাতে ফেলে না দেওয়া হয়। বাজারে বাজারে নিজে ঘুরে বেড়াতেন। বলতেন যত্ন করে এগুলো জমিয়ে রাখতে। বিনিময়ে থোক হিসেবে মাসিক একটা টাকা দিতেন। এখন অবশ্য কেজি দরে কিনতে হয়। প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা। জুলফিকার আলম জানালেন, দেশজুড়ে এখন একটি বলয় গড়ে উঠেছে তাঁর। বিশেষ করে বন্দর এবং জেলা পর্যায়ে। অন্তত ২০০ লোক সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত। বাজারে যাঁরা মাছ কাটেন এবং আঁশ ছাড়ান, প্রথম কাজটা তাঁরাই করেন। কীভাবে—জানতে চাইলে বলেন, ‘আমিই শিখিয়ে দিয়েছি। পানি ও কেমিক্যাল দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে।

অন্তত দুই দিন শুকালে তা মচমচে হয়। এরপর সংরক্ষণ করে রাখেন। আমাদের প্রতিনিধিরা সেগুলো নিয়ে আসেন। এরপর আমাদের গুদামে রাখা হয়। আঁশের সঙ্গে ফাঁকে কিছু অন্য জিনিস ঢুকে যায়। যেমন পাখনা, লেজের অংশ, কানের অংশ, গাছের পাতা ইত্যাদি। এগুলো বাছাই করে ফেলে দিতে হয়। পরে প্যাকেট করা হয় একেকটি ২৫ কেজি করে। মাছের আঁশের বড় রপ্তানি গন্তব্য হচ্ছে জাপান। কিন্তু জাপানে সরাসরি পাঠানো যায় না। জাপানি একটি বড় কোম্পানি চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় দুটি আলাদা কোম্পানি খুলেছে। ওখানে আগে পাঠানো হয়। মূল কোম্পানি পরে নিয়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়াতেও এখন কারখানা গড়ে উঠেছে। রপ্তানির জন্য তৈরি করার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে। তাদের সনদ পাওয়ার পরই রপ্তানি করার অনুমতি মেলে।

আরও পড়ুন:  Dakshineswar Temple: আপনি কি জানেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের ইতিহাস ?

বছরে ৮০০ থেকে ১ হাজার টন মাছের আঁশ রপ্তানি করা যায় বলে জানান জুলফিকার আলম। তাঁরটিসহ বর্তমানে বাংলাদেশে মোট তিনটি কারখানা রয়েছে। মোট রপ্তানি আনুমানিক দেড় লাখ ডলারের পণ্য। তবে বেশি পরিমাণ রপ্তানি তিনিই করেন। তিনি রপ্তানি করেন বছরে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলারের পণ্য। বাকিটা অন্য দুই কারখানা করে। ওষুধ, প্রসাধনসামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্ট ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় মাছের আঁশ। কোলাজেন নামক একটি পণ্য বিক্রি হয় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। দোকানে দোকানে পাওয়া যায়। তা–ও তৈরি হয় মাছের আঁশ দিয়ে—এসব কথাও জানান জুলফিকার আলম। জুলফিকারের প্রতিষ্ঠানের নাম মেক্সিমকো। মা এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির সংক্ষিপ্ত রূপ মেক্সিমকো।

এর সঙ্গে যৌথভাবে কিছু করতে চায় জাপানের মূল কোম্পানি। কয়েকবার ঘুরেও গেছেন ওই কোম্পানির প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশে একটি কারখানা করার চুক্তি করবে বলে গত ফেব্রুয়ারিতে তাদের আবার আসার কথা ছিল। এলে আর্থিক চুক্তি হতো মেক্সিমকোর সঙ্গে। এখন জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী ডিসেম্বরের দিকে আসবেন। গোটা বিশ্বের এই পণ্যে জাপানি কোম্পানিটিই নিয়ন্ত্রণ করে।

আরও পড়ুন:  Interesting facts: জানেন, স্মার্টফোন কতদিন পর-কীভাবে পরিষ্কার করা উচিত ?

জুলফিকার আলম বলেন, ‘একবারেই ফেলনা একটা জিনিস থেকে আমরা রপ্তানি আয় করছি। প্রায় শতভাগ মূল্য সংযোজন এই পণ্যে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমরা নগদ প্রণোদনার আবেদন করেছি। বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশন এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। বলেছে, এই পণ্য প্রণোদনা পাওয়ার যোগ্য। যতটুকু জেনেছি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মাছের আঁশকে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এই প্রণোদনা পেলে রপ্তানি বাড়বে কয়েক গুণ।’

Featured article

%d bloggers like this: