নিজস্ব প্রতিবেদনঃ এদিন ৫ মে বুদ্ধ পূর্ণিমা। এই দিনটি গোটা পৃথিবীর বৌদ্ধধর্মালম্বীরা অত্যন্ত পবিত্রতার সঙ্গে পালন করেন। এই দিনেই ভগবান গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বোধি লাভ করেছিলেন এবং তাঁর মহাপরিনির্বাণ হয়েছিল। তাই বৈশাখী পূর্ণিমার এক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ভগবান বুদ্ধ হলেন ত্যাগ ও শান্তির প্রতীক। সারা পৃথিবীতে শান্তির বাণী ছড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। আর সেই আলোকে আলোকিত হয়েছি আমরা। তাঁর মতানুযায়ী চললে, কঠিন জীবনও অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। অন্ধকার মনে ফেরে হারিয়ে যাওয়া আনন্দ।
তবে ভগবান বুদ্ধ শুধু ধর্মপ্রচারক ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার প্রতীক। তাঁর কথা মতো চললে, আপনি মনের দিক থেকে যেমন আলোকিত হবেন, ঠিক তেমনই ফিরবে স্বাস্থ্য। বৌদ্ধধর্মালম্বীদের কথায়, কোনও ব্যক্তি ভগবান বুদ্ধের দেখিয়ে দেওয়া পথ সঠিকভাবে অনুসরণ করে জীবন অতিবাহিত করলে অনায়াসে দীর্ঘায়ু লাভ করতে পারেন। এমনকী তাঁকে কোনও রোগও ছোঁয়ার সাহস করবে না।
ভগবান বুদ্ধের মতানুযায়ী, সুস্থ থাকতে চাইলে খাবারের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। আপনার পাতে কী খাবার রয়েছে, তার উপরই নির্ভর করে আপনার স্বাস্থ্য। তাই ডায়েটের দিকে নজর দিন। বৌদ্ধধর্মালম্বীদের অনেকেই আমিষ খাবার খানা না। তাঁরা প্রাণী হত্যায় বিশ্বাসী নন। তাই উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে জরুরি প্রোটিন, হেলদি কার্ব, ভিটামিন, মিনারেল ও ফ্যাট জোগার করে নেন।
তবে আমিষ খাবার খাওয়াতে তেমন কোনও বাধা নেই। তবে কী খাবেন, তা নির্বাচন করতে হবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। মাছ, মাংস, ডিমের পাশাপাশি ফল, শাক-সবজি খান প্রচুর পরিমাণে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ডায়েটে অল্প বিস্তর পরিবর্তন করতে পারলেই অনায়াসে রোগ মুক্ত থাকা সম্ভব। মেলে দীর্ঘায়ু।
বৌদ্ধধর্মালম্বীরা, সাধারণত সকালের শুরুটা ব্রেকফাস্ট দিয়ে করেন। ব্রেকফাস্টে তাঁদের পাতে ডিমের অমলেট, মাছ ও সবজি থাকে। অর্থাৎ মোটের উপর পেট ভর্তি করেই খান তাঁরা। তাঁদের মতে, সকালে এই ধরনের খাবার খেলে শরীর চাঙ্গা থাকে। এমনকী পেটও থাকে সুস্থ। অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলে রোগ জীবাণুর আক্রমণ থেকে বাঁচা সম্ভব হয়। সক্কাল সক্কাল ব্রেকফাস্টে সেরে ফেলুন। তাতেই উপকার মিলবে হাতেনাতে!
বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের একাংশ ফাস্টিং বা উপোস করায় বিশ্বাসী। তাঁরা নিজেদের মনের ও শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য এই কাজটি করে থাকেন। ভগবান বুদ্ধ মনে করতেন, বেশি খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। আপনার শরীর যতটা চায় ঠিক ততটাই খেতে হবে। এতেই দেহের লাভ। আধুনিক বিজ্ঞানও কিন্তু সেই তত্ত্ব মেনে নিয়েছে। বর্তমানে চালু হয়েছে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। এক্ষেত্রে উপোস করার মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখার প্রস্তুতি নেওয়া চলছে। আপনিও এই নীতি মেনে চলতে পারেন। মাঝেমধ্য়ে উপোস করলে ক্ষতি কী!
সুস্থ থাকতে চাইলে ফিটনেসের উপর জোর দিতেই হবে। আর এটাই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা মন থেকে বিশ্বাস করেন। তাই ছোট বয়স থেকেই তাঁরা শরীরচর্চায় মনোনিবেশ করেন। এতে বিভিন্ন অসুখ থেকে তাঁরা নিজেকে বাঁচাতে পারেন। তবে শুধু শরীর নয়, বর্তমান সময়ে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ আনাও জরুরি। আর সেই কাজটি করতে চাইলে নিয়মিত ধ্যান করতে হবে। এক্ষেত্রে মেডিটেশন মনের সঙ্গে শরীরের মিলন ঘটাতে পারে। এর মাধ্যমেই দূর হয় নানা মানসিক জটিলতা। হেসে-খেলে কাটিয়ে ফেলা যায় জীবন।