ওজন বেশি থাকা বা ওবেসিটি বহু অসুখের কারণ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, ওজন বেশি থাকার সমস্যাকেই এখন রোগ হিসাবে গণ্য করা হয়। তাই ওজন কমাতে হবে দ্রুত গতিতে। তবে খুব কঠিন কোনও ব্যায়াম নয়, বরং হেঁটেই কমাতে পারেন ওজন। ওজন বেশি থাকার অর্থ হল, সারা শরীরে অত্যধিক মেদ রয়েছে। আর মেদের বহর বাড়লেই একাধিক অসুখ পিছু নেয়। আসলে অতিরিক্ত ফ্যাট মেটাবলিজমের হারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই কারণেই মূলত বিপাকীয় নানা অসুখ ধাওয়া করে।
বিশেষজ্ঞদের কথায়, ওজন বেশি থাকা ব্যক্তিদের ডায়াবিটিস, হাই প্রেশার, কোলেস্টেরল, হার্টের অসুখ, স্ট্রোক ইত্যাদির আশঙ্কা থাকে কয়েকগুণ বেশি। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু ধরনের ক্যানসারও হওয়ার আশঙ্কা এনাদের রয়েছে। তাই চিকিৎসকরা বিএমআই মাপার কথা বলেন। বিএমআই রাখতে হবে ১৮ থেকে ২৫-এর মধ্যে। ওজন কমাবেন কী ভাবে? এই কার্যসিদ্ধির অনেকগুলি পথ রয়েছে। তবে সবথেকে সহজতম পথ হল হাঁটা। এক্ষেত্রে দিনে কিছুটা সময় হাঁটলেই ওজন কমবে।
হাঁটা বলতে আমরা যা বুঝি, সেই হেলেদুলে চলায় তেমন লাভ হয় না। বরং ওজন কমাতে হাঁটতে হয় কিছুটা জোরে। এক্ষেত্রে শ্বাস ফোলে, ঘাম ঝরে। এই উপায়ে হাঁটলেই লাভ মিলবে। হাঁটার এই নির্দিষ্ট ধরনকে বলে ব্রিস্ক ওয়াকিং। ঘণ্টায় ৩ মাইলের থেকে জোরে হাঁটলে তবেই বলা যায় ব্রিস্ক ওয়াক। ব্রিসক ওয়াক করার সময় আপনি কথা বলতে পারবেন। দ্রুত ওজন ঝরাতে চাইলে একটু উঁচু রাস্তায় হাঁটতে পারেন। এতে দ্রুত ক্যালোরি ঝরবে। এক্ষেত্রে সিঁড়ি চড়তে পারেন বা কোনও ব্রিজে উঠতে পারেন। দেখা গিয়েছে, এমন কৌশল মেনে চললে ওজন কমার হার বৃদ্ধি পায়। তবে হাঁটুতে ব্যথা থাকলে সিঁড়ি ওঠানামা করার প্রয়োজন নেই। এতে হাঁটুর ক্ষয় হয়। বরং খাড়া রাস্তায় চলার চেষ্টা করুন। আশা করছি সমস্যা হবে না।
হাঁটলেই ওজন কমে। তবে ওজন খুব বেশি হলে শুধু হেঁটে তা কমাতে অনেকটা সময় লেগে যায়। সেক্ষেত্রে হাঁটার পাশাপাশি রেজিস্টেন্স ট্রেনিং করতে পারেন। ধরুন সকালে হাঁটতে বেরলেন। তারপর হাঁটার মাঝেই পার্কের কোথাও একটু দাঁড়িয়ে রেজিস্টেন্স ট্রনিং করুন। এক্ষেত্রে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ অনায়াসে করতে পারেন। চেষ্টা করুন স্কোয়াট, পুশআপ, ট্রাইসেপ ডিপস, বার পিজ, লাউঞ্জ করার। এইসব ব্যায়ামেই ওজন কমে, পেশির শক্তিও বৃদ্ধি পায়। ওজন কমাতে চাইলে দিনে মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটলেই চলে। সেক্ষেত্রে একবারে সময় বের করতে না পারলেও চলবে। সকালে ১৫, বিকেলে ১৫ এভাবে হাঁটতেও পারেন। এই উপায়ে সপ্তাহে ৭ দিন হাঁটলেই উকরা মিলবে। তবে সপ্তাহে ৫ দিনের কম হাঁটা যাবে না। চিকিৎসাবিজ্ঞান জানাচ্ছে, সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা হল মাস্ট। এই সময়টুকু চলতে পারলেই মিলবে উপকার। তাই দুশ্চিন্তা করবেন না।
শুধু হেঁটে লাভ হবে না। বরং আপনাকে ডায়েটে মন দিতে হবে। খাওয়া যাবে না ঘি, তেল, মাখন, বাইরের ফাস্ট ফুড ইত্যাদি। খেতে পারেন ঘরে তৈরি করা খাবার। পাতে থাকুক শাক, সবজি, ফল। এই খাবারে থাকা ফাইবার শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এমনকী ওজনও কমায়। তাই হাঁটার পাশাপাশি ডায়েটে বদল আনুন।