নিজস্ব প্রতিবেদন: রক্তের রঙ লাল। আবার আগুনের রঙও লাল। তাই বোধহয় লাল রঙ বিপদের বার্তা বহন করে। সবুজ রঙ নিরাপত্তার সংকেত দেয়। মানে সব ঠিক আছে। আবার হলুদ রঙ খুব স্পর্শকাতর। সবচেয়ে স্পষ্ট চেনা যায় এই রঙ। ছোটবেলা থেকে আমরা পাঠ্যবইতে পড়েছি, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে লাল, সবুজ এবং হলুদ রঙের ব্যবহার করা হয়। ট্রাফিক লাইটের লাল রঙের অর্থ গাড়ি বন্ধ রাখতে হবে, সবুজ রঙের অর্থ এখন গাড়ি চালানো যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এতোগুলো রঙের মাঝে কেন বেছে বেছে লাল, হলুদ, সবুজ- এই রঙ তিনটিকেই নেওয়া হলো। কেন বেগুনী, গোলাপি কিংবা নীল রঙ ব্যবহার করা হয় না?
ট্রাফিক সিগন্যালে এই প্রাইম তিনটি রঙের ব্যবহারের পেছনে আছে রঙের ব্যবহারের ইতিহাস। এর জন্য জানতে হবে, গাড়ির চলাচল ও প্রচলনের অনেক আগে থেকেই ট্রেনের ব্যবহার ও প্রচলন ছিল। ট্রেনের জন্যেই এই ট্রাফিক সিগন্যালের ব্যবহার করা হতো। প্রথম দিকে রেলওয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রেন থামানোর জন্য লাল রঙ, ট্রেন চলার জন্য সাদা ও সতর্কতা বোঝাতে সবুজ রং ব্যবহার করতো। তবে কিছুদিন পরেই সাদা রঙ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ট্রেন কন্ডাক্টরদের জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। রাতের বেলা দূর থেকে সাদা রঙ তারার মতো দেখাতো।
সাদা রঙ দেখানোর অর্থ ট্রেন এখন চলতে পারবে, অথচ ট্রেন কন্ডাক্টররা এই সিগন্যাল বেশিরভাগ সময় ধরতে ব্যর্থ হতো এবং ট্রেন ছাড়ার সময়ে গন্ডগোল দেখা দিতো। ফলে পরবর্তী সময়ে রেলওয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রেন চলার জন্য সাদার পরিবর্তে সবুজ রঙের ব্যবহার শুরু করে।
আর লালের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বলতে হয়, লাল সবসময়ই বিপদের সংকেত বহন করে। অন্যান্য সকল রঙের মাঝে লাল হলো সবচেয়ে দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রঙ। ফলে অনেক দূর থেকেই স্পষ্টভাবে এই রঙটি দেখা যায়। তবে একটা সময়ে গাড়ি থামানোর জন্য ব্যবহার করা হতো হলুদ রঙ, লাল নয়। ১৯০০ সালে গাড়ি থামানোর কিছু প্রতীকে হলুদ রঙ ব্যবহার করা হতো। কারণ অনেক বেশি অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে লাল রঙ সহজে দেখা যেত না, কিন্তু হলুদ রঙটি বোঝা যেত ভালোভাবেই। পরবর্তী সময়ে প্রতিফলিত হবার মতো উপাদান আবিষ্কৃত হলে ‘স্টপ’ প্রতীক হিসেবে লাল রঙের ব্যবহার শুরু হয়।
যেহেতু হলুদ রঙটিও লম্বা দূরত্ব থেকে সহজেই চোখে পড়ে, তাই হাসপাতাল, স্কুল, নির্মানাধীন ভবনের আশেপাশে সতর্কতা সাইন হিসেবে হলুদ রঙ ব্যবহার করা হয়। যার অর্থ- এই সকল স্থানে সতর্ক থাকা। এভাবেই ট্রাফিক লাইটের ব্যবহারে লাল, সবুজ ও হলুদ রঙের প্রচলন শুরু হয়।