নিজস্ব সংবাদদাতা :: গত ৫ মে-র ঘটনা। লাদাখের প্যাঙ্গং লেকের কাছে প্রায় আড়াইশ জন ভারতীয় ও চিনের সেনা জওয়ান রীতিমতো লাঠিসোটা, লোহার রড নিয়ে মারপিঠ করেন। একে অপরের দিকে আধলা পাথরও ছোড়েন। তাতে আহত দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন। তার চার দিন পর ৯ মে। এবার সিকিম-চিন সীমান্তে নাকু লা পাস। দু’দেশের প্রায় দেড়শ সেনা পরস্পরের সঙ্গে মারপিট, ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। তাতে দু’পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। এ ব্যাপারে সাউথ ব্লক তথা প্রতিরক্ষামন্ত্রক বা বিদেশমন্ত্রক কিন্তু তখনও স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি। তবে ব্যাপারটার মাত্রা বাড়তেই আর গোপন থাকল না। সেনা সূত্রেই জানা গিয়েছে, লাদাখের পূর্ব দিকে চিন অন্তত একশটি তাঁবু গেঁড়েছে। প্রচুর ভারী সরঞ্জাম নিয়ে এসে বাঙ্কার বানাচ্ছে। সেই সঙ্গে হঠাত্ করে সেনা মোতায়েন বাড়াতে শুরু করেছে সেখানে। পরে ১৯ মে এবং ২১ মে চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা টপকে ভারতীয় সেনা চিনের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে তাদের সেনাবাহিনীর টহলদারিতে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু তা রুখে দিয়েছে পিপলস লিবারেশন আর্মি তথা পিএলএ সেনারা। পাল্টা বিবৃতি দিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, ওয়েস্টার্ন সেক্টর বা সিকিম সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করেছে বলে যদি কেউ দাবি করে তা সঠিক নয়। ভারতীয় সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখার এপারেই ছিল। বরং সম্প্রতি চিনা সেনা বারংবার ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে ঢুকে পড়ে স্বাভাবিক টহলদারির প্রক্রিয়ায় গোল বাধাচ্ছে। ভারত-চিন সীমান্ত বিবাদ ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় জমিতে স্পষ্ট কোনও সীমা নেই। সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্তকে মোটামুটি ভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ওয়েস্টার্ন, মিডল ও ইস্টার্ন। ওয়েস্টার্ন সেক্টরে ‘জনসন লাইন’ জম্মু কাশ্মীরের লাদাখ ও আকসাই চিনের মধ্যে সীমারেখা টেনে রেখে। মিডল সেক্টরে রয়েছে উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল। যেখানে মোটামুটি ভাবে কোনও বিবাদ নেই। আর ইস্টার্ন সেক্টরে চিন দাবি করে অরুণাচল প্রদেশ দক্ষিণ তিব্বতের অংশ। সেই দাবি ধারাবাহিক ভাবে খণ্ডন করে চলেছে নয়াদিল্লি। বস্তুত ওয়েস্টার্ন ও ইস্টার্ন সেক্টরে চিনা সেনা আকছার ভারতের দিকে ঢুকে পড়ে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে অন্তত ১০২৭ বার তা করেছে চিনা সেনা। ২০১৯ সালে ওয়েস্টার্ন ও সিকিম সেক্টর মিলিয়ে ৪৯৭ বার ভারতের দিকে ঢুকে পড়েছিল চিনা সেনা। কিন্তু এখন যে ভাবে চিনা সেনা বারবার ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ছে তাতে অশান্তির অশনিসংকেত দেখা যাচ্ছে বলেই কূটনীতিকদের একাংশের মত।