ঋত্বিক দে :: করোনা রুখতে আয়ুর্বেদিক থেকে হোমিওপ্যাথি ওষুধের নাম জানিয়ে পরামর্শ দিলো কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক। উইনানি, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি, যোগাভ্যাস, সিদ্ধা — এই পাঁচ চিকিৎসা পদ্ধতির উপর নির্ভর করে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে করোনার বিরুদ্ধে মোকাবিলার করার পরামর্শ দিলো কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক।সচেতনতা এবং আগাম সতর্কতার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রকের ভরসা ভারতীয় বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির উপর। কেন্দ্রের আয়ুষ মন্ত্রকের এই পরামর্শ মতোই অনেকেই লাইন দিচ্ছেন হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকানে।
বিশ্বজুড়ে চলছে নিরন্তর গবেষণা। করোনা ভাইরাস নিধনে এখনও আবিষ্কার হয়নি কোনও ওষুধ। আমেরিকা, চিন, জার্মানি, ইংল্যান্ডের মতো তাবড় তাবড় দেশ ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য নিরন্তর কাজ করে চলেছে। আর এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে করোনার করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য একটি নির্দেশিকায় বিভিন্ন বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি বা ধারার একাধিক ওষুধের নাম ও সেটি খাওয়ার নিয়মাবলির-ও পরামর্শ দিয়েছেন। এর পাশাপাশি আয়ুর্বেদিক, ইউনানি বা হোমিওপ্যাথি ওষুধগুলি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে বলে নির্দেশিকায় উল্লেখ করে জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক সূত্রে। চলুন সেগুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক ——-
১. হোমিওপ্যাথি ওষুধ :- মন্ত্রকের পরামর্শ, হোমিওপ্যাথি ওষুধ আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০সি (Arsenicum Album 30c) খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়বে ৷ ওষুধটি পরপর ৩ দিন খালি পেটে দিনে একবার খেতে হবে ৷ সকালে খালি পেটে কয়েক ফোঁটা ওষুধ বা কয়েকটি বড়ি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ৷ একমাস পর একই নিয়মে আবার খেতে হবে এই ওষুধ৷ এছাড়াও ফুসফুসের যে-কোনো ধরণের সংক্রমণ রুখতে এই ওষুধ ব্যবহার করা হয় বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক সূত্রে। সাধারণত রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে এই ওষুধ দেওয়া হয়। করোনা-আবহে মন্ত্রকের পরামর্শের পরই আর্সেনিকাম অ্যালবামের বিক্রি বেড়েছে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের মতে, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ালেও, করোনা ভাইরাসের উপর এই ওষুধ কাজ করে না। এর পাশাপাশি, ব্রায়োনিয়া অ্যালবা (Bryonia Alba), রাস টক্স (Rhus tox), বেলাডোনা গেলসেমিয়াম ইউপেটেরিয়াম (Belladonna Gelsemium Eupatorium) ইত্যাদি ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খাওয়া যেতে পারে, যা করোনা মোকাবিলায় কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে বলে আয়ুষ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে।
২. সিদ্ধা পদ্ধতির ওষুধ :- কাবাসুরা কুদিনীর (Kabasura kudineer) দিনে একবার খাবার আগে প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ৯০ মিলিলিটার (ml) এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪৫ মিলিলিটার (ml)।
৩. যোগাভ্যাস বা যোগাসন :- প্রাণায়াম, উষ্ট্রাশন, বজ্রাসন, ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম, ভ্রামরি প্রাণায়াম ও অন্যান্য স্নায়োবিক উদ্দীপনা নিয়ন্ত্রণকারী আসন করা যেতে পারে। এর সঙ্গেই সূর্যস্নান, হাইড্রো থেরাপি ও অ্যারোমা থেরাপিকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
৪. ইউনানি পদ্ধতি নির্ভর ওষুধ (নির্ধারিত পাচন) :- বেহিদানা (Behidana), উন্নাব (Unnab), সেপিস্তান (Sapistan)।
৫. ভেষজ চিকিৎসা :- আমলকি, তুলসি, আদা, হলুদ আর পাতিলেবু আন্দাজ মতো মিসিয়ে সরবত বা চায়ের মতো করে বড়রা ২৫০ মিলিলিটার (ml) করে দিনে দু’বার আর ছোটরা মিলিলিটার (ml) করে দিনে দু’বার খেতে হবে। এছাড়া, গোলমরিচ, তুলসি আর হলুদ একসঙ্গে ফুটিয়ে ২০ থেকে ৫০ মিলিলিটার (ml) করে দিনে দু’বার খেতে হবে।
হয়তো উপরিউক্ত এই ওষুধ গুলো করোনা ভাইরাস নিধন করতে সক্ষম নয় তবুও আয়ুষ মন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুযায়ী এই ওষুধগুলো শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে তা বলাই বাহুল্য। এর উপর ভিত্তি করেই করোনা যুদ্ধে হারাতেই হবে করোনাকে, জিততে হবে মানবসভ্যতাকে; আমরা করবো জয়, নিশ্চয় !