চয়নিকা চন্দ্র, কলকাতা: প্রাচীন ভারতের হিন্দু ধর্মগ্রন্থের মতে যুগ যুগ ধরে ভগবান বিষ্ণু এই বিশ্ব সংসারের পালক। বিভিন্ন যুগে তিনি নানা অবতার রূপে আমাদের ধরিত্রতে অবতরণ করেন, বিশ্ব সংসারের সকল মানুষকে ন্যায়পরায়ণতার ও সত্যের পথ প্রদর্শন করতে মিথ্যার উপর সত্যের জয় প্রতিষ্ঠা করতে শিখিয়েছেন। ত্রেতা যুগে রাম জণ্মেছিলেন ভগবান বিষ্ণুর অবতার রূপে জন্মেছিলেন। অর্থাৎ রাম নবমী পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল অধর্মকে নিক্ষেপ করে ধর্মকে স্থাপন করা। মন্দ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির সূচনা করা।
কিন্তু এই পূজোর অন্য আরেকটি গুরুত্ব রয়েছে। গুরুর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য ভক্তরা এই পূজো করে থাকেন। বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রাম। বলা হয় ভগবান বিষ্ণু বিভিন্ন অবতারে জন্মই নিয়েছিলেন বিভিন্ন কারণে। রাম হিসেবে জন্মগ্রহণের মূল কারণ ছিল লঙ্কাধিপতি কর্বুররাজ রাবণকে শাস্তি দেওয়া। তবে এরই পাশাপাশি সুশাসক ও প্রজাপ্রেমী এক রাজা হিসেবেও কিংবদন্তি হয়ে রয়েছেন রাম। ‘রামরাজ্য’ শব্দটি কার্যতই একটি মিথ হয়ে রয়েছে যুগ যুগ ধরে। এই দিনে ভগবান রামের জন্মদিন হিসেবে পালন করেন হিন্দুরা। দিনটি হিন্দু শাস্ত্রে একটি উল্লেখযোগ্য দিন। এদিন ভক্তরা উপবাস করেন ও গঙ্গায় ডুব দিয়ে স্নান করেন। সেই সঙ্গে মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনাও করেন।
ভগবান রামের ভক্তরা এটিকে অত্যন্ত শুভ দিন হিসেবে বিবেচনা করে এবং তারা এই গোটা দিনটিতে ভগবান রামের কাহিনী শোনেন। এই দিনে রাম মূর্তির পূজা করা হয় এবং ভক্তরা নদী ও জলাশয়ে পবিত্র ডুব দেন। ভক্তরা ভগবান রামের কীর্তন এবং ভজনে নিজেকে জড়িত রাখেন। ভগবান রাম ও তাঁর ভাইদের জন্মস্থান অযোধ্যাতে এই উৎসবটি অত্যন্ত নিষ্ঠার সহিত উদযাপিত হয়। গোটা দেশের মন্দিরগুলি, এই দিনে বিশেষ পুজোর আয়োজন করে থাকে। ভক্তরা ভগবান রামকে সন্তুষ্ট করতে এবং তাঁর কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য এই দিনে উপবাস করেন। উৎসবের দিন সকালে হিন্দুদের আদি দেবতা সূর্য দেবকে জল প্রদান করে, সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী সূর্য দেবতার আশীর্বাদ গ্রহণ করা হয়। রাম নবমী উপলক্ষ্যে ধার্মিক ব্যক্তিরা সমগ্র দিন জুড়ে বৈদিক মন্ত্র পাঠ করেন। সমগ্র দিনজুড়ে ভক্তিমূলক গান গাওয়া বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় বইগুলি থেকে পাঠ করে শোনাবার কথা বলা হয়। এই দিনটিতে রাম কথার বর্ণনা করে, রাম কাহিনী পড়ে দিনটি পালন করা হয়। অনেকে মন্দিরে যান, অনেকে বাড়িতে রামের মূর্তিতে পুজো করেন। কথিত আছে এই পূজো করলে হনুমানজীর আশীর্বাদও পাওয়া যায়।