নিজস্ব প্রতিবেদন: বাড়ির সবথেকে ছোট। কিন্তু দায়িত্ব সবথেকে বেশি। তাই তো অল্প বয়সেই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল তাকে। অভাব তাঁকে বাধ্য করেছিল ছবিতে অভিনয় করতে। কারণ তিনি যে অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। বাবা ঢাকা থেকে অর্থসাহায্য পাঠাতে পারছিলেন না। তাই বাধ্য হয়ে কাজের সন্ধানে খুব অল্প বয়সে অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন তিনি। নাটকের জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোনের চরিত্রে ‘নতুন ইহুদি’ নাটকে প্রথমবার রঙ্গমঞ্চে অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় সাবিত্রীর।

অভাব-অনটনে সংসারের হাল ধরতে নাটকের পাশাপাশি নাচের অনুষ্ঠান করতেন সাবিত্রী। এরপর সুযোগ আসে রুপোলি পর্দায় অভিনয়ের। ১৯৫১ সালে অগ্রদূত পরিচালিত ‘সহযাত্রী’ ছবিতে অভিনয় করেন সাবিত্রী। ছবিতে নায়ক উত্তমকুমারের পার্শ্বনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেই প্রথম উত্তমকে কাছ থেকে দেখা সাবিত্রীর। অভাব অনটনের জন্য অভিনয়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হলেও ভালোবেসে অভিনয়টা আজীবন করে গিয়েছেন সে। এরপর ১৯৫২ সালে ‘পাশের বাড়ি’ ছবিতে প্রথমবার তাঁকে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। এরপর ‘পাশের বাড়ি’, ‘রাতভোর’, ‘উপহার’, ‘অভয়ের বিয়ে’, ‘নূপুর’, ‘গলি থেকে রাজপথ’, ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’, ‘কুহক’, ‘বধূ’, ‘ভ্রান্তি বিলাস’, ‘উত্তরায়ণ’, ‘জয়া’, ‘কাল তুমি আলেয়া’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘মাল্যদান’ প্রভৃতি। ধীরে ধীরে টালিগঞ্জ পাড়ায় সকলের প্রিয় সাবিত্রী হয়ে ওঠেন তিনি।

অর্থাভাব আর ছোটবেলা থেকে সিনেমার প্রতি আকর্ষণ তাকে টেনে নিয়ে যায় সিনেমা জগতে।উত্তম সুচিত্রা এবং উত্তম সুপ্রিয়াকে নিয়ে তোলপাড় তখন প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। একদম শেষ দিকে উত্তম কুমারের সাথে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের জুটি খুবই জনপ্রিয় হয়। উত্তম কুমার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে সাবিত্রীর বেশ সুনাম গেয়েছেন। তার অভিনয়গুণে মুগ্ধ ছিলেন মহানায়ক। হাত বাড়ালেই বন্ধু, দুই ভাই, নিশিপদ্ম, মোমের আলো ইত্যাদি সিনেমায় তাদের রসায়ন প্রশংসিত হয়েছে। ধন্যি মেয়ে বা মৌচাকের মত হাস্যরসাত্মক ছবিতে সাবিত্রীর সাথে জুটি বেঁধে উত্তম কুমারের হাস্যরসাত্মক চরিত্র ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গেছে। তার সাথে অবশ্য উত্তম কুমারের কোনো অন্তরঙ্গতার খবর আসেনি। কিন্ত আজও দর্শকদের সাবিত্রী একা। সংসারের দায়িত্ব কাধে নিয়ে আজীবন অভিনয় চালিয়ে গেলেন। অবিবাহিত মানুষটা আজও একা সংসারেই হাল টানছে। একাই চালাচ্ছে নিজের ঘর।
